বিটকয়েন (Bitcoin)

Bitcoin এর ইতিহাস এবং সৃষ্টির পেছনের কারণ

Latest Technologies - বিটকয়েন (Bitcoin) - Bitcoin পরিচিতি | NCTB BOOK

Bitcoin-এর ইতিহাস এবং সৃষ্টির পেছনের কারণগুলো জানতে হলে আমাদের ২০০৮-২০০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকট এবং Bitcoin-এর সৃষ্টিকর্তা Satoshi Nakamoto-এর চিন্তাভাবনার দিকে নজর দিতে হবে। Bitcoin মূলত একটি বিকেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম।

Bitcoin-এর ইতিহাস

২০০৮: Bitcoin-এর ধারণা এবং সৃষ্টিকর্তা

  • ২০০৮ সালের গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিস বা অর্থনৈতিক সংকটের সময় প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমের বিরুদ্ধে জনমনে আস্থা হ্রাস পেয়েছিল। ঐ সময়ে, একটি ছদ্মনাম ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী Satoshi Nakamoto একটি পেপার প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল "Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System"।
  • এই পেপারে Nakamoto একটি বিকেন্দ্রীভূত মুদ্রা সিস্টেমের প্রস্তাব দেন, যা মধ্যস্থতাকারী ছাড়া সরাসরি পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেনের সুবিধা দেবে এবং ট্রাস্টলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করবে।

২০০৯: Bitcoin-এর প্রথম সংস্করণ

  • ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে Bitcoin ব্লকচেইনের জেনেসিস ব্লক মাইন করা হয়, যাকে Block 0 বলা হয়। এই ব্লকটি মাইন করার মাধ্যমে Bitcoin নেটওয়ার্কের সূচনা হয় এবং এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল অর্থনৈতিক সিস্টেমের প্রথম ধাপ ছিল।
  • জেনেসিস ব্লকে একটি বার্তা ছিল, যা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন ছিল: "The Times 03/Jan/2009 Chancellor on brink of second bailout for banks."। এই বার্তা প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেম এবং ফিয়াট মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতার বিরুদ্ধে Satoshi-এর মনোভাব নির্দেশ করে।

২০১০: প্রথম Bitcoin ট্রানজ্যাকশন

  • ২০১০ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো Bitcoin বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা হয়। একজন প্রোগ্রামার, Laszlo Hanyecz, ১০,০০০ Bitcoin ব্যবহার করে দুটি পিৎজা কেনেন। এই ইভেন্টটি "Bitcoin Pizza Day" নামে পরিচিত এবং এটি Bitcoin-এর লেনদেনের প্রথম বাস্তব উদাহরণ।

২০১১-২০১৩: জনপ্রিয়তা এবং মূল্যবৃদ্ধি

  • Bitcoin-এর মূল্য এবং জনপ্রিয়তা ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে আরও কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি হয়, যেমন Litecoin এবং Namecoin, যা Bitcoin-এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
  • Bitcoin ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারী এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করে এবং একটি বিকল্প ডিজিটাল অর্থনৈতিক সিস্টেম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

২০১৭: বড় মূল্যবৃদ্ধি এবং মেইনস্ট্রিম স্বীকৃতি

  • ২০১৭ সালে Bitcoin-এর মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এটি প্রায় $২০,০০০-এ পৌঁছে যায়। Bitcoin মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এবং বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এবং এটি একটি Store of Value এবং ডিজিটাল গোল্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
  • একই সময়ে, বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠান Bitcoin-কে আইনগতভাবে বৈধ মুদ্রা হিসেবে বা সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে।

২০২1: ইনস্টিটিউশনাল বিনিয়োগ এবং মূল্যবৃদ্ধি

  • ২০২১ সালে বড় বড় ইনস্টিটিউশন এবং কোম্পানি, যেমন Tesla, MicroStrategy, এবং Square, Bitcoin-এ বিনিয়োগ শুরু করে। এর ফলে Bitcoin-এর মূল্য আরও বৃদ্ধি পায় এবং এটি একটি গ্লোবাল অ্যাসেট হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • Bitcoin-এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।

Bitcoin সৃষ্টির পেছনের কারণ

Bitcoin সৃষ্টির পেছনে মূলত প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা ছিল। নিচে Bitcoin সৃষ্টির কয়েকটি মূল কারণ আলোচনা করা হলো:

১. প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেম এবং মধ্যস্থতাকারী ছাড়া লেনদেনের প্রয়োজন

  • প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রতিটি লেনদেন মধ্যস্থতাকারী যেমন ব্যাংক বা ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত হয়, যা খরচ এবং সময় বাড়ায়।
  • Bitcoin একটি বিকেন্দ্রীভূত পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যা মধ্যস্থতাকারী ছাড়া সরাসরি লেনদেন করার সুযোগ দেয় এবং খরচ ও সময় কমিয়ে দেয়।

২. মুদ্রাস্ফীতি থেকে সুরক্ষা এবং সীমিত সরবরাহ

  • প্রচলিত ফিয়াট মুদ্রার সরবরাহ অসীম এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো চাইলেই মুদ্রা প্রিন্ট করতে পারে। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার মূল্য হ্রাসের ঝুঁকি থাকে।
  • Bitcoin-এর সরবরাহ সীমাবদ্ধ (২১ মিলিয়ন), যা মুদ্রাস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে মূল্য ধরে রাখার (Store of Value) সুযোগ দেয়।

৩. ট্রাস্টলেস এবং নিরাপদ লেনদেন সিস্টেম তৈরি করা

  • প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করতে হয়। Bitcoin একটি Trustless সিস্টেম তৈরি করে, যেখানে ব্লকচেইনের মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেন সুরক্ষিত এবং Immutable থাকে।
  • Proof of Work (PoW) মেকানিজমের মাধ্যমে মাইনাররা ব্লক ভ্যালিডেট করে, যা নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি এবং ডেটার সত্যতা নিশ্চিত করে।

৪. পিয়ার-টু-পিয়ার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

  • Bitcoin-এর মাধ্যমে Satoshi Nakamoto একটি পিয়ার-টু-পিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব অর্থ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায়।
  • Bitcoin-এর বিকেন্দ্রীভূত কাঠামো ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি সুরক্ষিত রাখে এবং তাদের পরিচয় গোপন রেখে লেনদেনের সুযোগ দেয়।

৫. ফিয়াট মুদ্রার বিকল্প এবং ডিজিটাল গোল্ড তৈরি করা

  • Satoshi Nakamoto প্রচলিত ফিয়াট মুদ্রার সীমাবদ্ধতার বিকল্প হিসেবে একটি ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা নিরাপদ এবং সারা বিশ্বে স্বীকৃত হতে পারে।
  • Bitcoin একটি ডিজিটাল গোল্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা Store of Value হিসেবে কাজ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সম্পদের মূল্য ধরে রাখতে সহায়ক।

উপসংহার

Bitcoin সৃষ্টির পেছনে Satoshi Nakamoto-এর উদ্দেশ্য ছিল একটি বিকেন্দ্রীভূত, স্বতন্ত্র, এবং ট্রাস্টলেস ডিজিটাল মুদ্রা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা, যা প্রচলিত ফিয়াট মুদ্রা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। Bitcoin-এর ইতিহাস এবং এর গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে যে এটি একটি নতুন ধরনের আর্থিক ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। Bitcoin ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Content added By
Promotion